প্রথম শাড়িতে
-অঞ্জনা গোড়িয়া
স্কার্ট জামা ফেলে প্রথম শাড়ি পরি।
তখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি।
কাঁধে ঝোলা ব্যাগ পায়েতে চপ্পল
আঁচল গোঁজা কোমরে, মন চঞ্চল।
মেঠো পথ ধরে ছাতা মাথায়
ঠিক এগারোটায় স্কুলের দরজায়।
বয়স তখন চৌদ্দ কিংবা পনেরো।
কৈশোর খুলে ফেলে যৌবনের শুরু
বুক করে দুরু দুরু।
দুপাশের অজস্র চোখ উঁকিঝুঁকি মারে
আমার পথের পানে।
কখনো ভয় কখনো আতঙ্কে কেঁপে উঠি
এই বুঝি ওরা আসছে ধেয়ে আমার পিছু পিছু।
কান পেতে শুনি ওরা কী বলছে কিছু?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মুখে ব্যঙ্গোক্তি চাবুক মারে পিঠে
যখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি।
মাথায় নীল বেনি দুদিকে কাঁধের পাশে
জ্যাঠু হেঁকে বলে, বড়ো হয়েছ তুমি।
সাবধানেতে চলো মাথা নত করে
বৌদি মুচকি হাসে
এই যে ঠাকুরঝি কেউ প্রেমে পড়ে না যেন-
কথাগুলো লাগছিল বেশ
চোখের কোণের দুষ্টু হাসির লেশ।
ইস! কী যে বলো প্রেম আবার কী?
আমি ওসব বুঝি নাকি?
জড়িয়ে ধরে বৌদি -বড্ড হয়েছ ন্যাকা
এখনো শেখার অনেক কিছু বাকি।
প্রথম যেদিন শাড়ি পরে চলি স্কুলে
দিনটা আজও যাইনি ভুলে।
সেদিন থেকেই আমি নারী
পরিপাটি করে শাড়ি পরতে পারি।
বিছানায় ফেলে আঁচলে পিন করি।
শাড়ির ভাজে ভাজে ফুটে উঠেছি নারী
লাজুক চোখে আরশি ধরে দেখি
ইস! এত বড়োটি আমি।
মা হেঁকে বললে শাড়ি জড়িয়ে হোঁচট খাস না যেন।
ধমক দিয়ে বলি সবাই এত শাসন করছো কেন?
মা বলে, বড়ো হয়েছিস সাবধানেতে চলিস।
রাস্তার দুপাশে তাসের আড্ডায় কিংবা চায়ের দোকানে বসে
তারাই দেখছে নিঁখুত ভাবে একটু ভালোবেসে।
বুঝলাম আমি নীলাঞ্জনা নারী
অঙ্গে আমার নীলপাড় শাড়ি।
গরম ভাতে কিছু ফ্যান মেখে
মুখে তুলি গোগ্রাসে
ঘড়ির কাঁটায় দশটায়
আর দেরি নয়।
ছুটতে ছুটতে ঘন্টাখানেক পথ
একেবারে স্কুলের গেটে।
মীরাদি ধমক দিয়ে বলে, একি চলন তোমার?
এখন নবম শ্রেণিতে পড়ো ভুলে গিয়েছ নাকি?
নম্রভদ্র মার্জিত চলনে চলো।
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দিদির পানে
একদিনেই এত বড়ো হলাম জীবনে!
স্কার্ট জামা ফেলে আমি পরেছি শাড়ি
বুঝলাম আমি এখন পরিপূর্ণ নারী।